মো. লিখন ইসলাম, বাকৃবি সংবাদদাতা:
“ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো, নাইল তেলাপিয়ার উৎপাদন এবং জলবায়ুু অভিযোজন বৃদ্ধি ও মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন নিষ্ক্রিয়করণ করে ভ্যাকসিন তৈরী” বিষয়ক তিনটি গবেষণা প্রকল্পের উদ্বোধন কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষিতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন উন্মোচনের লক্ষ্যে ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ (সিএসআর) প্রকল্পের আওতায় এ গবেষণা প্রকল্পে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল)।
শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে ওই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রতিটি প্রকল্পের মেয়াদকাল ১৮ মাস (জুলাই ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪)। প্রকল্প তিনটিতে মোট আর্থিক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর উপাস্থাপনা শেষে মুক্ত আলোচনা পর্ব পরিচালনা করা হয়।
কর্মশালার শুরুতেই "বাংলাদেশে ফল ও সবজির সংরক্ষণ ক্ষতি কমানোর জন্য হিমাগার সমস্যার সমাধান" শীর্ষক একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক চয়ন কুমার সাহা। এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ৭২ প্রজাতির ফল এবং ১৫৬ প্রজাতির সবজি উৎপাদিত হয়। সবজি উৎপাদনে দেশের অবস্থান তৃতীয় এবং ফল উৎপাদনে দশম হলেও রপ্তানীতে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এতে সংরক্ষণজনিত ক্ষতি হয় প্রায় ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ। এই ক্ষতি কমাতেই হর্টিকুল (হর্টিকালচার এবং কোল্ড স্টোরেজ পদ্ধতির সমন্বয়) পদ্ধতির মাধ্যমে নির্ধারিত কিছু ফল ও সবজির ওপরে গবেষণা করা হবে। এতে প্রায় ৫০ শতাংশ সংরক্ষণ ক্ষতি কমানো যাবে। সংরক্ষিত উৎপাদন বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পরবর্তীতে "উৎপাদন এবং জলবায়ুু অভিযোজন বৃদ্ধির জন্য নাইল তেলাপিয়া (নাইলোটিকা) মাছের একটি উচ্চ-ফলনশীল জাতের বিকাশ" বিষয়ে উপস্থাপনা প্রদান করেন ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ গোলাম কাদের খান। এসময় তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তেলাপিয়ার বিশুদ্ধ প্রজাতি নিয়ে এসে মলিকুলার ট্যুলস ব্যবহার করে প্রজনন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল প্রজাতি তৈরী করা হবে। এতে উৎপাদন প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
সবশেষে "বাংলাদেশে মুরগির এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের একটি নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিনের উন্নয়ন" বিষয়ক নিজস্ব গবেষণার উপর আলোকপাত করেন প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. জাহান আরা বেগম। তিনি বলেন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের দেশীয় স্ট্রেইন থেকে তৈরী করা হবে ওই ভ্যাকসিন। গবেষণা সফলভাবে সম্পন্ন হলে ভ্যাকসিনের আর কোনো অপ্রতুলতা থাকবে না।
এসময় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালন আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, এই প্রথম কৃষিতে ১৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এর মধ্যে অবহেলিত কৃষকদের ফসলের বীজ, কম্বাইন্ড হারভেস্টর, পাওয়ার টিলার, ট্র্যাক্টরসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের জন্যই করোনাকালীন সময়ে দেশে খাদ্য সংকট তৈরী হয়নি। কৃষিবিদদের অবদানের কথা মাথায় রেখেই কৃষিতে ডাচ-বাংলার এই অর্থায়ন।
উপাচার্য বলেন, আমাদের গবেষণার অবস্থান প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। তবে বরাবরই গবেষণাগুলোর কার্যক্রম নির্ধারিত হয় প্রকল্পের অর্থায়নের উপর। এতে গবেষণাগুলো কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন করতে পারে। উন্নতমানের শিক্ষা ও গবেষণা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক হলো যথাযথ পরিবেশ। এটি নিশ্চিত করতে আমাদের কাজ করতে হবে। এই গবেষণা প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন। অনুষ্ঠানের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এমদাদুল হক চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিবিবিএল-সিএসআর প্রকল্প সমন্বয়ক প্রকৌশলী মো. আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ। কর্মশালায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট অনুষদের বিভিন্ন শিক্ষক ও গবেষণা সহায়কগণ উপস্থিত ছিলেন।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন