বিগত ৬ বছরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের নেই কোনো অর্জন

বিগত ৬ বছরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের নেই কোনো অর্জন, university news, bangla campus news, bangla songbad, bangla news paper

বিগত ৬ বছরে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের নেই কোনো অর্জন

সাইদ হোসেন নাইম,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা 


শিক্ষা, গবেষণা, উন্নয়ন মোটোকে সামনে রেখে সাইক্লোন গতিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে চললেও পিছিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শারীরিক শিক্ষা দপ্তর। বিগত ৬ বছরে থলিতে পুরুষ্কার হিসেবে নেই কোনো অর্জন। ২০১৭ সালের আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ভলিবলে ৩য় স্থান অর্জনের পর এখন অবধি দপ্তরটি পায়নি কোনো পুরুষ্কারের ছোঁয়া। ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার প্রতিটি সেগমেন্টে ছিল ভরাডুবি। ক্রিকেট, ফুটবল কিংবা ভলিবল কোথাও মেলেনি সাফল্যের দর্শন। 


৬ বছরের ব্যর্থতা অনুসন্ধানে মেলে কাদা ছোড়াছুড়ি। ব্যর্থতা মেনে নিতে নারাজ দপ্তরটি। শিক্ষার্থীরা দপ্তরটির অদক্ষতা, খোলোয়ার নির্বাচনে নেপোটিজম, পরিকল্পনার অভাব, গতিহীনতা, বিকেএসপি কোটা না থাকা, ডিসিপ্লিন অনুযায়ী কোচ না থাকা, প্রতিদিন খেলোয়ারদের চর্চা না করানোর মতো অসংখ্য অভিযোগ আনলেও দপ্তরটির অতিরিক্ত পরিচালক জিয়া উদ্দিন মন্ডল দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তর, প্রকৌশল দপ্তর এবং শিক্ষার্থীদের অনিচ্ছাকে। মাঠ সংস্কারের দীর্ঘসুত্রিতা, খেলোয়ারদের জন্য জিমনেসিয়ামের অভাব, শিক্ষার্থীদের খেলোধুলায় অনীহা ও বাছাইকৃত খেলোয়ারদের চর্চার অনিচ্ছাকেই দায়ী করছেন তিনি।এদিকে জিয়া উদ্দিন মন্ডল নিয়মিত এবং পূর্ণ সময় অফিস করেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ। 


অনুসন্ধানে জানা যায়, শুধুমাত্র আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার সময় সর্বমোট ১৮-২০ দিন চর্চা করানো হয় বাছাইকৃত খেলোয়ারদেরকে। পরে আবার অতল গহব্বরে হারিয়ে যায় চর্চা নামক সাফল্যের চাবিকাঠি। খেলোয়াড়দের নিয়মিত চর্চা নিয়েও দপ্তরটির নেই কোনো  মাসিক ও বার্ষিক পরিকল্পনা। নেই ডিসিপ্লিনভিত্তিক কোনো কোচ। দীর্ঘদিন ধরে  বিভাগগুলোকে নিয়ে দপ্তরটির নেই কোনো আয়োজন। প্রতিবার ৩০-৪০জন খেলোয়ার নতুন যুক্ত হলেও নেই সর্বমোট খেলোয়ারদের কোনো ডাটাবেজ। শুধু মেলে গতবারের আনঃবিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচিত খেলোয়ারদের তালিকা।


এ ব্যাপারে আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান ফুটবল দলের খেলোয়াড় সানোয়ার রাব্বী প্রমিস বলেন, আপনি ক্রীড়া বলেন কিংবা শিক্ষা, যেকোনো ক্ষেত্রেই আপনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া আপনি কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন করতে পারবেন না।বিশেষ করে খেলাধুলায় আপনাকে একটা ভিশন রাখতে হবে।আপনার জাতীয় পর্যায়ে পারফর্ম করতে গেলে ভালো খেলোয়াড় দরকার। আর ভালো খেলোয়াড় মানসম্পন্ন মাঠ, অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা, ডিসিপ্লিন অনুযায়ী প্রফেশনাল কোচ না থাকলে সম্ভবই না। দীর্ঘমেয়াদী চলমান চর্চা ছাড়া জাতীয় পর্যায়ে সফলতা একদমই  অসম্ভব।নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের না আছে খেলা উপযোগী একটি মাঠ, না আছে কোচ, না আছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। কিভাবে তাহলে আপনার  ভালো ফলাফল আসবে? নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে যথেষ্ট আগ্রহী খেলোয়াড় রয়েছে, কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থা, উদ্যোগ ও সুযোগ সুবিধা না থাকায় আমরা ভরাডুবি দেখতে পাচ্ছি। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণ হবে না যদি না জাতীয় পর্যায়ের কোনো কিউরেটর দ্বারা একটা ভালো মাঠ তৈরী হচ্ছে, কোচের তত্বাবধায়নে সারা বছর অনুশীলন হচ্ছে এবং বিকেএসপি কোটা চালু হচ্ছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিকেএসপির সাবেক ছাত্রদের সমন্বয়ে জাতীয় মানের দল গঠন করে যেখান থেকে আমরা অনেক পিছিয়ে। মাঠ সংকট না কাটলে, পরিকল্পিতভাবে খেলোয়াড়দের অনুশীলন ও আন্তঃবিভাগীয় বিভিন্ন খেলা মাঠে না গড়ালে ব্যর্থতার সময়টা আরও দীর্ঘায়িত হবে। 


দীর্ঘদিন দপ্তরের এমন ব্যর্থতায় শারীরিক শিক্ষা দপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক জিয়া উদ্দিন মন্ডল বলেন, খেলাধুলা চর্চায় বাছাইকৃত খেলোয়াড়দেরও রয়েছে অনীহা-অনিচ্ছা। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত প্রতিজন খেলোয়ার সম্পূর্ণ ফ্রিতে খেলার সরঞ্জাম, পোশাক, বুটজুতা, খাবার, যাতায়াতখরচসহ দৈনিক ৪০০ টাকা পেলেও চর্চায় আসেন না নিয়মিত। সংস্কার দীর্ঘসূত্রিতায় আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠ। বারংবার পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তর এবং প্রকৌশল দপ্তরকে বলেও এখনো মেলেনি মাঠের সমাধান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই কোনো জিমনেসিয়াম। স্বতন্ত্র কোনো জিমনেসিয়াম না থাকায় খেলোয়াড়গণ পান না শরীরচর্চার সুযোগ।একইসাথে পান না ইনডোর গেইমের সুযোগও। এছাড়া পাওয়া যায় না খেলাধুলায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের। সংকট নিরসনে প্রতিটি বিভাগে খেলাধুলাকে এসাইনমেন্ট হিসেবে দিলে খেলাধুলায় শিক্ষার্থীরা ঝুঁকে পড়বে,আগ্রহী হয়ে উঠবে। বিশ্ববিদ্যালয় ৮ হাজার শিক্ষার্থী চিনবে শারীরিক শিক্ষা দপ্তরকে। প্রাত্যহিক চর্চার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা নিজে নিজে অনুশীলন করুক না। শিক্ষার্থীরা কেনো আমাদের চিঠির আশায় থাকবে? 


বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠের দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারে জানতে চাইলে  প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. জোবায়ের হোসেন বলেন, মাঠে ঘাস লাগানো পরীক্ষাধীন রয়েছে। কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের পরামর্শে আমরা আগাচ্ছি। ঘাস মাটিতে যাতে ভালোভাবে লেগে যায় এজন্য সময় নেওয়া হচ্ছে।সামনে বর্ষা মৌসুম। তখন ঘাস পুরোপুরি লেগে গেলেই খুব দ্রুত মাঠের সংস্কার কার্যক্রম শেষ হবে।


স্বতন্ত্র জিমনেসিয়ামের ব্যাপারে পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও ওয়ার্কার্স দপ্তরের পরিচালক প্রকৌশলী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি কম থাকায় স্বতন্ত্র জিমনেসিয়ামের ব্যাপারে আমাদের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে নির্মাণাধীন টিএসসিতে ৩/৪ কক্ষ জিমনেসিয়াম হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এখানে হ্যান্ডবল, বাস্কেটবলের মতো ইনডোর গেইমের সুযোগ থাকবে না, তবে শরীরচর্চার জন্য কিছু সরঞ্জাম থাকবে। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সর্বমোট ১৫০ একর আয়োতনের বিশ্ববিদ্যালয় চেয়েছি। এটি অনুমোদন পেলে স্বতন্ত্র জিমনেসিয়ামের ব্যাপারে আমরা ভাববো।

কোন মন্তব্য নেই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

© all rights reserved
made with by wikibangla.net