কেন আমরা কৃষি খাতে বেশি দৃষ্টি আরোপ করব?

কেন আমরা কৃষি খাতে বেশি দৃষ্টি আরোপ করব? Agriculture news, bangla news,

 

কেন আমরা কৃষি খাতে বেশি দৃষ্টি আরোপ করব?


তসলিম উদ্দিন হায়দার তমাল!


বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের ৭৭ শতাংশেরও বেশি শ্রমশক্তি গ্রামীণ এলাকায় বাস করে এবং গ্রামীণ এলাকার দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সরাসরি কৃষিতে নিযুক্ত । যার অর্থ আনুমানিক ৮৭ শতাংশ গ্রামীণ পরিবার তাদের আয়ের অন্তত অংশের জন্য কৃষির উপর নির্ভর করে।যা দেশের শ্রমশক্তি বিবেচনায় খুব বৃহত একটি অংক। দুর্ভাগ্যবশত, ২০০০ সালে; আমাদের দেশে কৃষি শ্রমিক ছিল ৮০% [মোট জনসংখ্যার]। এটি এখন ৪০% এ নেমে এসেছে। এবং এটি অনুমান  করা হচ্ছে  যে ২০৩০ সালের মধ্যে; এটি ২৭% এ নেমে যাবে। এখন প্রশ্ন হলো এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে আমরা কীভাবে কৃষি পণ্য সরবরাহ করব? সমীকরণটা দাঁড়াচ্ছে, জনসংখ্যা বাড়ছে > কৃষি খাত ও কৃষি শ্রমিক  কমছে। এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যাকে কৃষি সেবা দেওয়ার জন্য কীভাবে আমরা কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে পারি , সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার পরিবর্তে আমরা শিল্পায়নের উপর অনেক বেশি প্রচেষ্টা করছি।


"The Business Standard" নামক ই সংবাদপত্র থেকে প্রকাশিত ''Why Bangadesh agriculture loses out to productivity"  প্রতিবেদনে জানা গেছে  যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ৫-৬ বছরে মাটির তাপমাত্রা আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে । ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। তাহলে এই পরিস্থিতিতে এখন আমাদের কী করা উচিত? প্রাথমিকভাবে  আরও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ফসল নির্বাচন করা উচিত, যা মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। আমাদের কৃষিখাতে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। সৌভাগ্যবশত,  কৃষি ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ১০৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকসই চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হচ্ছে। ফলন বাড়াতে এবং 'দ্রুত পাকা করার' পদ্ধতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। যার ফলে, ফসল উৎপাদনের সময়  কমাতে এই পদ্ধতি সত্যিই অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। নানা অসংগতি সত্ত্বেও বাংলাদেশে কৃষির যে উন্নয়ন হয়েছে, আমি বলব সেখানে সরকারের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এ ক্ষেত্রে কৃষিতে সরকারের ভর্তুকি একটি সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু সম্প্রতি সরকারের ‘বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি’র এক সভায় আগামী বছরের বাজেটে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সেবার ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনার কথা জানা গেছে। এরই মধ্যে কেরোসিন ও ডিজেলের দাম বেড়েছে, যার প্রভাব সেচের ওপর পড়ছে। এখন যদি সারের দাম বাড়ে এবং বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সেচের খরচ বাড়ে, তা কৃষকদের আরো বেশি চাপের মধ্যে ফেলবে। আর গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে যে সামগ্রিক প্রভাব পড়বে, তাতেও কৃষির উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে। ফলে এ রকম একটি চিন্তা-ভাবনা করা যুক্তিসংগত নয়।


সার্বিক যে পরিস্থিতি, তাতে আমাদের কৃষিতে সহায়তা দিয়ে যেতে হবে। কারণ কৃষি ভালো থাকা মানে গ্রামীণ অর্থনীতি ভালো থাকা। আর গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নতি করার অর্থ হচ্ছে গ্রাম-শহরের পার্থক্য কমিয়ে আনা, যা অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর (মাইগ্রেশন) তথা শহরমুখী প্রবণতা কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে। যাতায়াত ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতির ফলে আমাদের গ্রাম ও শহরের পার্থক্য কমেছে বটে, কিন্তু সেটা শুধু ভৌগোলিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে মোটেও নয়। এখন সার ও কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি পেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ধাক্কা লাগবে। এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া অপরিকল্পিত বসতি ও শিল্পায়নের কারণে যেভাবে কৃষিজমি কমে আসছে সেটাকেও রোধ করতে হবে।


সর্বপরি, গবেষণার ভিত্তিতে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি মেনে নিতে সরকার ও দেশের সকল সচেতন জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

© all rights reserved
made with by wikibangla.net