ঢাবিতে স্বল্প খরচে মাস্টার্সের সুযোগ


নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অল্প খরচে বাইরের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স করে দেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কলা-সামাজিক বিজ্ঞান-বাণিজ্য অনুষদ থেকে বিজ্ঞান অনুষদে শিক্ষার্থীরা এ সুযোগ বেশি পাবেন। তবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার মধ্যদিয়ে বাইরের এ শিক্ষার্থীদের ভর্তি হতে হবে। 

অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক শেষে চাকুরি জীবনে প্রবেশ করে আবার অনেকে বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়। এমন ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স প্রোগ্রাম গুলোতে শুরু থেকেই অনেক সিট ফাঁকা থেকে যায়। ফাঁকা থাকা এসব সিটে বাইরের শিক্ষার্থীদের সুযোগ করে দিতেই এমন উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ।

তিনি বলেন: অনেক ডিপার্টমেন্টেই কিছু ছেলে মেয়ে চাকুরি নিয়ে চলে যায়। চার বছর পর আর মাস্টার্সে ভর্তি হয় না। যেহেতু মাস্টার্স চালু আছে, সেখানে যদি আমরা কাউকে সুযোগ দিতে পারি- সে চিন্তা থেকেই বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। সেরকম যোগ্য ছেলেমেয়ে পেলে আমরা তাদের ভর্তি করাবো। এটা এখন বলতে গেলে ‘টোকেন’। আমরা যদি দেখি এর পজিটিভ ইম্প্যাক্ট আছে তাহলে আমরা এটি বিস্তৃতও করতে পারি।

নিয়মিত এ মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হবার জন্য বেশি কিছু নিয়ম মানতে হবে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের। জানা গেছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একই খরচে মাস্টার্স করতে পারবেন। আসন ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে সিজিপিএ ৩.২৫ এর ওপর থাকলে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন বাইরের শিক্ষার্থীরা। পাশ করা সাপেক্ষে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারবেন। কলা-সামাজিক বিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদের তুলনায় বিজ্ঞান অনুষদে এ সুযোগ বেশি পাবেন শিক্ষার্থীরা। থাকবে না বয়সের কোন সীমারেখা, শিক্ষা বিরতির বিষয়টিও শিথিল করা হয়েছে। তবে আবাসিক হলে বাইরের শিক্ষার্থীদের থাকার সুযোগ থাকবে না।

প্রতিবছর কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগেই প্রায় ২০ জনের মতো বাইরের শিক্ষার্থী ভর্তি মাস্টার প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ পাবেন। দুই বছরের এই মাস্টার্স প্রোগ্রামে পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের সাকুল্যে খরচ হবে ২০ হাজার টাকার মতো।

কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক হোসেন কামাল তুষার এ প্রসঙ্গে বলেন: বাইরের শিক্ষার্থীরা আমাদের নিয়মিত ফি প্রদান করে মাস্টার্স করতে পারবে। আমরা ২০১৯ সাল থেকেই এ প্রোগ্রামটা চালাচ্ছি।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিপার্টমেন্ট বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য মাস্টার্স প্রোগ্রাম উন্মুক্ত করেছে। এর ফলে পাবলিক-প্রাইভেট যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে পারবে। আমি মনে করি এখানে মাস্টার্স করার মধ্যদিয়ে ওই সকল শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার আরও উজ্জ্বল হবে।

সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স- ডিপ্লোমাসহ নানা কোর্সের কারণে শিক্ষার বাণিজ্যিকরণের দায়ে সমালোচনা শুনতে হয়ে দেশের ঐতিয্যবাহী এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। এ বিষয়টি টেনে এনে সাবেক আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনে এসে সমালোচনা করেন।

তিনি বলেছিলেন:  ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের পাশাপাশি স্বাভাবিক লেখাপড়ার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে কি না ভাবতে হবে। আমি মনে করি জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ছাত্র-শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা ভেবে দেখবেন। মনে রাখতে হবে, জনগণের অর্থেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। তাই তাদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাইরের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগের মধ্যদিয়ে দেশের উচ্চশিক্ষার পথ আরও অবারিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url